IQNA

সুরা আহকাফের প্রাথমিক পরিচিতি ও কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা

19:00 - October 18, 2017
সংবাদ: 2604101
সুরা আহকাফ পবিত্র কুরআনের ৪৬ তম সুরা। অবশ্য নাজিল হওয়ার ধারাক্রম অনুযায়ী এটি ছিল পবিত্র কুরআনের ৬৬ তম সুরা। মক্কায় নাজিল-হওয়া এই সুরায় রয়েছে ৩৫ আয়াত।

বার্তা সংস্থা ইকনা: কুরআনের মহত্ত্বের বর্ণনা, শির্ক ও মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, পুনরুত্থান বা পরকাল ও মহান আল্লাহর ন্যায়বিচারের আদালত, আদ জাতির ঘটনা, মহানবীর (সা) আহ্বানের বিস্তৃতি ও সার্বজনীনতা, মু’মিনদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দান আর কাফিরদের সতর্ক করা এবং ধৈর্য ও প্রতিরোধের দিকে মহানবীর (সা) দাওয়াত- সুরা আহকাফের কয়েকটি আলোচ্য বিষয়।  

সুরা আহকাফের প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। আর কাফেররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। মহান আল্লাহর সৃষ্টি-জগতের যেমন সূচনা আছে তেমনি আছে পরিণতি। সৃষ্টি জগতের রয়েছে নির্দিষ্ট মেয়াদ। নির্দিষ্ট সময়ে এই জগত ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআন সত্য ও সৃষ্টি-জগত ত্রুটি-বিচ্যুতিহীন হওয়া সত্বেও কাফিরদের যেসব বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে কাফিররা গোড়ামি ও একগুঁয়েমির কারণে সেসব সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করছে।

সুরা আহকাফের ১৩ নম্বর আয়াতে সৎকর্মপরায়ন মানুষের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে: নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।

ঈমান ও সৎ বা নেক আমলের সব পর্যায়ের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরা হয়েছে এই আয়াতে। কারণ বিশ্বাসের মূলনীতি হচ্ছে তাওহিদ তথা একত্ববাদ। আর একত্ববাদে অটল ও অবিচল থাকার ওপর তথা পালনকর্তা হিসেবে আল্লাহকে সব সময় মেনে চলার ওপরই নির্ভর করে ধৈর্য ও প্রতিরোধ যা হচ্ছে সৎকাজের মূল চাবিকাঠি।

অন্য কথায় প্রকৃত সৎকর্মশীল তারাই যারা বিশ্বাসের দিক থেকে একত্ববাদের অনুসারী এবং কাজকর্মের দিক থেকে ধৈর্য ও প্রতিরোধের পথ অনুসরণ করেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের মানুষ অতীতের কোনো বিষয়েই দুঃখ অনুভব করেন না এবং ভবিষ্যত নিয়েও তাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তারা জীবনে চলার পথে নানা বাধা-বিঘ্ন, কষ্ট কিংবা নানা ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতেও রুখে দাঁড়ান। আর তাদের এই মহতী গুণগুলো সব সময়ই অক্ষয় ও অম্লান থাকে। এইসব ব্যক্তির পুরস্কার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা আহকাফের ১৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন:

তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করত, এটা তারই প্রতিফল।

সুরা আহকাফের ১৫ নম্বর আয়াতে বাবা-মায়ের প্রতি সদাচার করার এবং তাদের যত্ন নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে মহান আল্লাহ বলেছেন:

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে 480; বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে, তখন বলতে লাগল,হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ সৌভাগ্য দান কর যাতে আমি তোমার সেইসব নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আর আমার সন্তান ও বংশধরদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।

বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন করা মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতারই সোপান। এখানে সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের অধিকার, বিশেষ করে মায়ের অধিকার তুলে ধরা হয়েছে। কারণ, একজন মা গর্ভধারণের সময় ব্যাপক কষ্ট সহ্য করেন। মাতৃগর্ভে ভ্রুণ যতই বড় হতে থাকে ততই তার কষ্ট বাড়তে থাকে। অবস্থা এমন হয় যে মা ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না ও খেতে পারেন না সময় মত। গর্ভবতী মায়ের প্রশান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বলতে কিছুই থাকে না। কিন্তু মা তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য এইসব কষ্টই সহ্য করেন। আর সন্তান প্রসــবের পর মায়ের জীবন হয়ে পড়ে আরও কঠিন। দিন-রাত সন্তানের যত্ন নিতে হয় তাকে এবং সন্তানের সব চাহিদা ও ইচ্ছা পূরণ করতে হয় তাঁকে। শিশু সন্তানের খাদ্যের চাহিদা মেটানো হয় মায়ের দুধ দিয়ে। আর এসবই মায়ের অনন্য ত্যাগের কিছু দৃষ্টান্ত।

পবিত্র কুরআন মায়ের গর্ভধারণ ও শিশুকে দুধ পান করানোর সময়কার সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছে। শিশুকে গর্ভে ধারণ করা থেকে তাকে দুধ পান করানোর সময় হচ্ছে ত্রিশ মাস। কখনও কখনও মাতৃগর্ভ থেকে ছয় মাসের শিশুও জন্ম নিয়ে থাকে। ত্রিশ মাস থেকে গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময় ৬ মাস বাদ দিলে থাকে ২৪ মাস। অর্থাৎ শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করানো বৈধ। এর চেয়ে কম সময় বা বেশি সময় পর্যন্ত শিশুকে দুধ পান করানো ঠিক নয়। যা-ই হোক এই ত্রিশ মাসে মায়েরা শিশুর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। সেই শিশু বড় হতে থাকে ক্রমেই। আর এক সময় সে চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয় এবং এ সময় তার শারীরিক শক্তি ও ক্ষমতা পূর্ণতা পায়। অন্যদিকে এ সময়ের মধ্যে ঈমানদার মানুষের জন্য জীবনের চলার পথ ও নীতি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যায় যাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই পথ চলা অব্যাহত থাকে। তাই এ সময় সে মহান আল্লাহর কাছে কয়েকটি বিষয়ের তাওফিক চেয়ে মুনাজাতে বলে:

হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ সৌভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার সেইসব নেয়ামতের শোকর করি যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আর আমার সন্তান ও বংশধরদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর। আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।
captcha