IQNA

ইমাম হাসান (আ.)-এর দানশীলতা ও মহানুভবতা

1:54 - June 14, 2018
সংবাদ: 2605979
১৫ রমজান ইমাম হাসান ইবনে আলী আল-মুজতাবা (আ.)-এর জন্মদিন। তৃতীয় হিজরির এই দিনে তিনি মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের দিনটি ছিল মঙ্গলবার। হযরত হাসান (আ.)-এর মূল নাম ছিল আল-হাসান এবং আল-মুজতাবা ছিল তাঁর উপাধি। তাঁর একটি ডাক নাম ছিল আবু মুহাম্মাদ।
 
 
 
 
বার্তা সংস্থা ইকনা: আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ছিলেন তাঁর পিতা এবং মহানবী (সা.)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা (আ.) ছিলেন তাঁর মাতা। ইমাম হাসান ছিলেন তাঁদের জ্যেষ্ঠ পুত্র। হযরত হাসান ছিলেন মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শিশু হাসানের ডান ও বাম কানে যথাক্রমে আযান ও ইকামত দেন এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক তাঁর নাম রাখেন আল-হাসান।

ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর শৈশব জীবনের প্রথম সাত বছর অতিবাহিত হয় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দয়ার্দ্র পৃষ্ঠপোষকতায়। তিনি তাঁর সকল মহান গুণের শিক্ষা দান করে এবং খোদায়ী জ্ঞান, ধৈর্য, সহনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, দানশীলতা ও সাহসিকতার প্রশিক্ষণ দিয়ে ইমাম হাসান (আ.)-কে সমৃদ্ধ করে তোলেন। জন্মগতভাবে মাসুম এবং আল্লাহ কর্তৃক স্বর্গীয় জ্ঞানে সজ্জিত হওয়ায় তাঁর অন্তরাত্মা লওহে মাহফুজে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।

মহানবী (সা.) অনেক সময়ই বলতেন : ‘হাসান ও হোসাইন আমার সন্তান।’ এ কারণে হযরত আলী তাঁর অন্য সন্তানদের কাছে বলতেন : ‘তোমরা আমার সন্তান আর হাসান ও হোসাইন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তান।’ মহানবী (সা.) হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হোসাইন (আ.) সম্পর্কে আরো বলেছেন, দণ্ডায়মান থাক আর উপবিষ্ট থাক আমার এই দুই সন্তান হচ্ছে ইমাম।’

একবার তিনি হজে যান। হঠাৎ শুনতে পান যে একজন লোক আল্লাহকে বলছে,“হে খোদা,তুমি আমাকে দশ হাজার দেরহাম দান কর...। ইমাম তৎক্ষণাৎ বাড়ীতে ফিরে আসেন এবং ঐ ব্যক্তির জন্যে ঐ পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করেন।

একদিন ইমামের এক দাসী তাকে এক গুচ্ছ ফুল উপহার দেয়। ইমাম প্রতিদানে সেই দাসীকে মুক্ত করে দিলেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হল : “আপনার এমনটি করার কারণ কি?” তখন তিনি উত্তরে বলেন : “আল্লাহ্ আমাদেরকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি পরক্ষণেই নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।

এক দিন সিরিয়াবাসী একজন লোক মুয়াবিয়ার উস্কানিতে ইমামকে যা-তা বলে গালিগালাজ করে। প্রতুত্তোরে ইমাম কিছুই বললেন না। শেষ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিটি চুপ হয়ে গেল। অবশেষে ইমাম মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে সালাম করলেন আর বললেন : “ওহে বৃদ্ধ,মনে হচ্ছে তুমি এখানে আগুন্তুক। আমার ধারণা তুমি ভুলের মধ্যে আছো। যদি তুমি আমাদের সন্তুষ্টি চাও তাহলে তা করবো। আর যদি তুমি অন্য কিছু কামনা কর,যদি কোন দিক নির্দেশনার প্রয়োজন মনে কর তোমাকে দিক নির্দেশনা দান করবো। যদি তোমার স্কন্ধে কোন বোঝা থাকে তাহলে তা তুলে নিবো। যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও তাহলে তোমাকে পেট ভরে খেতে দিবো। যদি তুমি কোন কিছুর প্রয়োজন অনুভব কর,তোমার প্রয়োজন মিটাবো। তোমার যে কোন কাজের জন্যে আমি প্রস্তুত আছি। আর যদি তুমি আমাদের মেহমান হও তাহলে আরামে থাকতে পারবে,কেননা তোমাদের আপ্যায়নের জন্যে সকল উপকরণের ব্যবস্থা আছে।

লোকটি লজ্জিত হয়ে ক্রন্দন শুরু করে দেয়,আর বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি জমিনের বুকে আল্লাহর খলীফা। আল্লাহ্ ভাল করেই জনেন যে তাঁর রেসালাত কোথায় নির্ধারণ করতে হয়।২০ আপনি ও আপনার পিতা এখন পর্যন্ত আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু এখন আপনারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।

বৃদ্ধ লোকটি সেদিন ইমামের মেহমান হয়েছিল। ইমামের কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় সে ইমামের প্রেমিক হয়ে ফিরে গেলো।

captcha