IQNA

হাদীসে গাদীরে খুমের বিশুদ্ধতা সংক্রান্ত আলোচনা

12:05 - July 29, 2022
সংবাদ: 3472196
তেহরান (ইকনা): সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ২৩ বছর ধরে নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের পর বলেছেন, 'নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আর কোনো নবী আমার মতো এত কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েনি।' তিনি তার নবুওয়তের শেষ বছরে বিদায় হজ্বের সময় গাদিরে খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্থলাভিষিক্তের নাম ঘোষণা করেন।

প্রথমত : "আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা ।" - এ হাদীসটি বানোয়াট বলে যে কথা ও বক্তব্য খারেজীরা দিয়ে থাকে তা সর্বৈব ভিত্তিহীন । খারেজীদের কথার কোনো দাম নেই । তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া কাফের মুনাফিক সম্প্রদায় ; কারণ সহীহ , সাবিত ( প্রতিষ্ঠিত ) ও আপামর মুসলিম উম্মাহর কাছে স্বীকৃত হাদীস মোতাবেক হযরত আলী (আ )কে ভালোবাসা মুমিন হওয়ার লক্ষণ এবং তাকে ঘৃণা করা নিফাকের লক্ষণ । আর এই সব মাল'ঊন ( অভিশপ্ত ) খারেজী হযরত আলীকে ( আ) কাফের বলে বিশ্বাস করত !! অতএব এ সব মাল'ঊনের কথা দলীল হতে পারে না । ওদের কথা ওদের মতোই মারদূদ্ ও প্রত্যাখ্যাত । আর যারা এ সব মাল'ঊন খারেজীর কথা বিশ্বাস করবে ও তাদের কথা বলবে ওরাও ওদের মতো মারদূদ ও প্রত্যাখ্যাত হবে ।
দ্বিতীয়ত: হাদীসে গাদীরে খুম  সহীহ ( সত্য - বিশুদ্ধ ) ও সাবিত ( প্রতিষ্ঠিত ) বরং মুতাওয়াতির হাদীস যদিও তা বিভিন্ন লফযে [ শব্দ ও বাক্যে (ইবারত )] বর্ণিত হলেও তাওয়াতুরে মা'নাভীর অধিকারী অর্থাৎ অর্থগতভাবে তা মুতাওয়াতির। আর মুতাওয়াতির হয়ে গেলে তখন হাদীসের সনদ যাচাই-বাছাই করা নিষ্প্রয়োজন ।

۱.من کنتُ مولاه فهذا عليٌّ مولاه

আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা

۲.من کنتُ مولاه فعليٌّ مولاه

আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা

۳. فَهٰذَا وَلِيُّ مَنْ أَنَا مَوْلَاهُ

অতএব আমি যার মাওলা এ তার মাওলা

۴. من کنتُ مولاه فَإِنَّ عَلِیّاً مولاه .

আমি যার মাওলা নিশ্চয় আলী তার মাওলা

۵. فَإِنِّيْ مَنْ کُنْتُ مَوْلَاهُ فَهٰذَا مَوْلَاهُ

অতএব নিশ্চয়ই আমি যার মাওলা এ তার মাওলা ।
এ সব বাক্য ও মতনের ( টেক্সট ) মধ্যে কি অর্থগত পার্থক্য আছে ? সব গুলোই রাসূলুল্লাহ ( সা) যাদের মাওলা তাদের মাওলা যে আলী সেই অর্থটাই প্রকাশ করছে ।
তৃতীয়ত: আল্লামা আলবানী , আল্লামা যাহাবী , ইবনে জরীর তাবারী , ইবনুল জাযারীর মতো বহু আলেম ও হাদীসবিদ এই হাদীসে মুওয়ালাত অর্থাৎ যার মধ্যে হাদীসে গাদীরে খুম রয়েছে তা  সহীহ ও মুতাওয়াতির (অকাট্য সূত্রে প্রতিষ্ঠিত) হাদীস বলেছেন। ইবনুল জাযারী প্রায় ৩০ জন সাহাবী থেকে এ হাদীসে গাদীরে খুম বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাযারী বলেছেন: জাম্মে গুফাইর ( অগণিত বিশাল সংখ্যক ব্যক্তি ) জাম্মে গুফাইর ( অগণিত বিশাল সংখ্যক ব্যক্তি ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে যাদের জ্ঞান নেই তারা যে এ হাদীসটি যঈফ দেখানোর চেষ্টা করেছেন তার কোনো গুরুত্ব নেই । তাযকিরাতুল হুফ্ফাযে আল্লামা যাহাবী বলেছেন : " আর যখন ইবনে জরীর অবগত হলেন যে ইবনে দাউদ গাদীরে খুমের হাদীসের ব্যাপারে আপত্তিকর  কথা বলেছেন তখন তিনি কিতাবুল ফাযায়েল নামক গ্রন্থ রচনা করে হাদীসে গাদীর সহীহ সাব্যস্ত করণ ( তাসহীহ ) সংক্রান্ত আলোচনা করেন । আমি ( যাহাবী ) ইবনে জরীর প্রণীত হাদীসে গাদীরে খুমের সনদ সমূহ সংক্রান্ত খণ্ডটি দেখেছি এবং আমি হাদীসে গাদীরে খুম এবং এর সনদসমূহের সংখ্যাধিক্যের কারণে বিস্ময়ে হতবাক ও অভিভূত হয়ে গিয়েছি । "
চতুর্থত: নাসাঈ সংকলিত কিতাবু খাসায়েসি আমীরিল মুমিনীন আলী ইবনে আবী তালিব - এর গবেষক ও পাদ টীকা সংযোজন কারী আবূ আব্দিল্লাহ আল আমেলী আস সালাফী আদ দানী ইবনে মুনীর আলে যাহাভী ৮৮ নং  হাদীসের পাদ টীকায় ( পৃ : ৭৮ এ ) লিখেছেন: " আমার বক্তব্য হচ্ছে : যে ব্যক্তি এ হাদীসের সনদসমূহ অধ্যয়ন ও গবেষণা করবে সে জ্ঞাত হবে যে এ সব সনদের অধিকাংশই সূর্যের মতো সহীহ ( বিশুদ্ধ , সত্য ও খাঁটি ) এবং এ সব সনদের মধ্যে হাসান সনদও বিদ্যমান। তবে এ হাদীসের সনদসমূহের মধ্যে যঈফ সনদের সংখ্যা কম । আর হাদীসটি সহীহ এবং তাতে কোনো সন্দেহ নেই। "
ইবনে তাইমিয়া ধৃষ্টতা ও স্পর্ধা প্রদর্শন করে বলেছেন যে " হাদীসটি ( হাদীসে গাদীর -ই খুম ) হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি , সূত্র ও কায়েদা সমূহের পরিপন্থী ! " আবূ আব্দুল্লাহ আল - আমেলী আস সালাফী আদ দানী ইবনে মুনীর আলে যাহাভী বলেছেন: " তাঁর ( ইবনে তাইমিয়া ) এ কথা মারদূদ ও প্রত্যাখ্যাত ( খাসায়েস , পৃ : ৭৮ ) । "
তহযীবুত তাহযীব গ্রন্থে ( খ : ৭ , পৃ :৩৩৯ )
ইবনে হাজার আস্কালানী লিখেছেন: তবে তিনি ( ইবনে আব্দুল বার) স্বীয় গ্রন্থে ( আল - ইস্তিয়াব ) যে ৯ ব্যক্তির নাম শুধু উল্লেখ করেছেন তাদের থেকে হাদীসে মুওয়ালাত বর্ণনা করেছেন । আর ইবনে জরীর তাবারী (স্বতন্ত্র) একটি গ্রন্থে এ হাদীসটি লিপিবদ্ধ , সংকলন ও সংগ্রহ করেছেন । আর  যাদের নাম ( ইবনে আবদুল বারের গ্রন্থে ) উল্লেখিত হয়েছে তাদের চেয়েও অনেক গুণ বেশি রাবীর উল্লেখ রয়েছে ইবনে জরীরের ঐ গ্রন্থে। আবুল আব্বাস ইবনে উকদাহ উক্ত হাদীস ( হাদীসে মুওয়ালাত) তাসহীহ ( সহীহ বলে প্রমাণ ও সাব্যস্ত ) করেছেন এবং এর সনদ সূত্র সমূহের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ , দৃষ্টি ও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ৭০ বা তার চেয়েও অধিক সংখ্যক সাহাবী থেকে এ হাদীসটি সনদ সহ (বিস্তারিত ভাবে) উল্লেখ ও বর্ণনা করেছেন।

অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায় যে হাদীসে গাদীরে খুম : (( আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা । )) সহীহ মুতাওয়াতির ( অকাট্য সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও বর্ণিত ) হাদীস যা আসলেই অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ সহীহ মুতাওয়াতির হাদীস অস্বীকার করা ঈমান পরিপন্থী কাজ।
 
সংগ্রহ ও অনুবাদ :ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
২৭যিল হজ, ১৪৪৩ হি

 

captcha