IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ২

হাওয়া; মানবতার জননী এবং আদম (আ.) থেকে একজন নারী

20:20 - July 07, 2022
সংবাদ: 3472100
তেহরান (ইকনা):  হযরত হাওয়া (আ.) মানব জাতির মা এবং পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, তাঁর অস্তিত্বের সারমর্ম আদমের মতই। আল্লাহ হযরত আদম (আ.)কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর তাঁর থেকে তাঁর স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন।

মানুষ হযরত আদম (আ.) এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়ার বংশধর। হযরত হাওয়া (আ.) হলেন প্রথম নারী এবং মানব জাতির জননী।  পবিত্র কুরআনের বলা হয়েছে, হযরত হাওয়া (আ.) হযরত আদমের (আ.) একজন স্ত্রী ছিলেন: 
 
يا آدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ
 
হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। 
সূরা বাকারা, আয়াত: ৩৫।
 
পবিত্র কুরআনে হযরত আদম (আ.)এর স্ত্রীর নাম উল্লেখ নেই। তবে হাদিস ও তাফসিরে তাঁর নাম "হাওয়া" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুফাসসিরগণ "হাওয়া" নামটিকে "জীবন্ত" (জীবন্ত সত্তা) শব্দ থেকে উদ্ভূত বলে মনে করেছেন, কারণ তিনি "সমস্ত জীবের" মা।
 
 
পবিত্র কুরআনে ধুলো ও কাদা থেকে হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু হাওয়ার সৃষ্টির বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়নি। কুরানের আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ প্রথমে আদমকে সৃষ্টি করেন এবং তারপর (বাকি মাটি থেকে) তাঁর স্ত্রীকে সৃষ্টি করেন:
 
خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا
 
তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তাঁর যুগল সৃষ্টি করেছেন।
সূরা যুমার, আয়াত: ৬। 
 
এই আয়াত অনুযায়ী মহান আল্লাহ "এক আত্মা" থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অধিকাংশ মুফাসসির মনে করেন যে "এক আত্মা" এর অর্থ আদম (আ.) এবং "দম্পতি" এর অর্থ হল “হাওয়া”।
 
সূরা নিসায় এক আত্মা (আদম) থেকে সমস্ত মানুষের সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁর থেকে আদম (আ.)-এর স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে পৃথিবীতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে পড়েছে। 
 
 يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
 
হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদের সকলকে এক সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর জোড়াকেও তাঁর (অনুরূপ বস্তু) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং (কেবল) তাদের উভয়ের থেকে বহু নর ও নারী পৃথিবীতে বিস্তার করেছেন; এবং সেই আল্লাহকে ভয় কর যার নাম সহযোগে পরস্পর যাচঞ্ঝা কর, আর আত্মীয়তার (সম্পর্কের বিচ্ছেদের) ক্ষেত্রেও (ভয় কর)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকলের (কর্মের) পর্যবেক্ষক।
সূরা নিসা, আয়াত: ১। 
 
তাই সৃষ্টিজগতে নারী ও পুরুষের অস্তিত্বের সারমর্ম একই।
 
মহfন আল্লাহ হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত (আ.) হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন।
 
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا
 
তিনিই তোমাদের এক সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁর (অনুরূপ বস্তু) হতে তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাঁর কাছে শান্তি লাভ করে। 
সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৯। 
 
সৃষ্টির পর হযরত আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী মহান আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে বাস করেন।
 
আল্লাহ তাদের বলেন: এখানে যত নেয়ামত আছে সব তোমরা ভক্ষণ করতে পার, তবে শুধুমাত্র ঐ গাছের কাছে যেও না। কারণ যদি তোমরা ঐ গছের কাছে যাও এবং ঐ ফল ভক্ষণ কর, তাহলে তোমরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 
 
«يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ»
 
এবং আমরা (আদমকে) বললাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে (পান) আহার কর, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না; অন্যথায় তোমরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সূরা বাকারা, আয়াত: ৩৫। 
 
কিন্তু শয়তান তাদের উভয়কে ধোঁকা দেয় এবং তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলে এবং এর কারণে তারা জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে বসবাস করেন।
 
ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মে, হযরত হাওয়াকে (আ.) একজন প্রতারিত এবং বিভ্রান্তিকর ব্যক্তি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাকে শয়তান প্রথমে প্রতারিত করে এবং তারপর তাঁর মাধ্যমে হযরত আদমকে (আ.) প্রতারিত করে; তাদের যুক্তি অনুযায়ী হযরত হাওয়া (আ.) আদমকে (আ.) প্রতারিত করেন। তবে পবিত্র কুরআনে হযরত আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.) উভয়কেই সমানভাবে দায়ী হিসাবে স্বীকৃত এবং শয়তান তাদের উভয়কে প্রলুব্ধ করেছে বলে অভিহিত করা হয়েছে: 
 
«فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ»
 
তখন শয়তান তাদের স্খলিত করার চেষ্টা করল এবং উভয়কে তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে বের করে দিল।
সূরা বাকারা, আয়াত: ৩৬। 

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha