IQNA

কুরআন কি বলে/৪১

নেতাদের ন্যায়বিচার ইসলামিক সামাজের শিক্ষার উৎস

20:59 - December 22, 2022
সংবাদ: 3473030
তেহরান (ইকনা): ইসলামী সংস্কৃতিতে, "ন্যায়বিচার" মানে অন্যের অধিকারকে সম্মান করা, যা "নিপীড়ন" এবং "লঙ্ঘন" শব্দগুলির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এবং এর বিস্তারিত অর্থ বলা হয় "সবকিছুকে তার নিজ জায়গায় রাখা বা সবকিছু সঠিকভাবে করা। " ন্যায়বিচার এতই গুরুত্বপূর্ণ যে কিছু দল একে ধর্মের অন্যতম মূলনীতি বলে মনে করেছে।

মানুষ সাধারণ স্বার্থ এবং পারস্পরিক চাহিদার ভিত্তিতে একত্রিত হয় এবং সমাজ গঠন করে। কিন্তু এই সমাজে সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে তাদের মধ্যে সমান ও সুষ্ঠু সম্পর্ক প্রয়োজন। ন্যায়বিচার হল একটি মৌলিক নীতি যার উপর সমাজের সামঞ্জস্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। এই আয়াতে মনোযোগ দেই:
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কিছু বিষয়ে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেগুলো (সফলতার সাথে) সম্পাদন করল তখন (আল্লাহ) বললেন, ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা (ইমাম) মনোনীত করলাম’; সে বলল, ‘আর আমার সন্তানদেরও মধ্য হতেও?’ তিনি বললেন, ‘(হ্যাঁ, তবে) আমার প্রতিশ্রুতি (ইমামতের বিষয়টি) অবিচারকদের জন্য নয় (এবং আপনার সন্তানদের মধ্যে যারা খাঁটি এবং নিষ্পাপ তারাই এই পদের যোগ্য)।’
সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৪।
এই আয়াতের অন্তত দুটি অংশ উল্লেখযোগ্য: প্রথম অংশ, যা হযরত ইবরাহীমর "নেতৃত্ব" নির্দেশ করে এবং দ্বিতীয় অংশটি, যা "নেতৃত্ব" এবং "ন্যায়বিচার" (অন্যায় পরিহার)-এর অবিরাম সাহচর্যের উপর জোর দেয়। এই আয়াতে "ইমামত" এর অবস্থান কি এবং "নবুওয়াতের" অবস্থানের সাথে এর সম্পর্ক কি তা আগেই বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, ইমামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য কি?
এই আয়াতের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ইমামের একটি মাত্র বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, অবশ্যই ইমামের বৈশিষ্ট্য শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তবে বলা যেতে পারে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল বৈশিষ্ট্য এই শব্দের মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে।
হযরত ইবরাহিম (আ.) একমাত্র নবী যাকে মুশরিক, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সবাই অনুসরণ করে বলে মনে করা হয়। এই আয়াতে ইবরাহীম (আ.)-কে মহিমান্বিত করার সময় তিনি পরোক্ষভাবে সবাইকে বলেন যে, যদি তোমরা তাকে সত্যিকার অর্থে গ্রহণ কর, তাহলে শিরক বন্ধ কর এবং তাঁর মতো আল্লাহর আদেশের প্রতি আনুগত্য কর।
এই আয়াতটি এমন একটি আয়াত যা শিয়াদের চিন্তা ও বিশ্বাসের ভিত্তি যে ইমামকে অবশ্যই নির্দোষ হতে হবে এবং যাকে জালিম বলা হয় বা জুলুম করে, সে কোন মতেই ইমামের পদে পৌঁছাবে না।
তাফসীরে নমুনার লেখক এই আয়াত সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় বিষয় বলেছেন: এই আয়াতটি “عَهْدِي”/"আহদী" শব্দের সাথে ইমামতের অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছে, যা সূরা আল-বাকারার ৪০ নম্বর আয়াতের সাথে ঐশী ঐতিহ্যের একটি দিক দেখায়। أَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ আমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের (সাথে কৃত) অঙ্গীকার (সওয়াব) পূর্ণ করব।
এর অর্থ হলো, আমি যে ইমামকে নিযুক্ত করেছি এবং তার প্রতি যদি তোমরা অনুগত কর, তবে আমি যে সমর্থন ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার প্রতিও অনুগত থাকব। এই ঐশ্বরিক ঐতিহ্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ইমাম এবং সম্প্রদায়ের নেতার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করে তার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
তাফসিরে নূর হতে এই আয়াতের দ্বিতীয় অংশের বাণী:
1- ইমামতির উৎপত্তি উত্তরাধিকার নয়, এটি যোগ্যতা যা ঐশী পরীক্ষায় বিজয় দ্বারা প্রমাণিত হয়। «فَأَتَمَّهُنَّ»
2- “ইমামত” হল মহান আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে একটি ঐশ্বরিক চুক্তি।  «عَهْدِي»
3- নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল ন্যায়বিচার। যে ব্যক্তির শিরক ও অত্যাচার করার ইতিহাস রয়েছে, সে ইমামতের যোগ্য নয়। «لا يَنالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ»

 

captcha